Ads

জীবনের উৎপত্তি বিষয়ক ওপারিন-হলডেনের পরীক্ষা

 জীবনের উৎপত্তি বিষয়ক ওপারিন-হলডেনের পরীক্ষাটির বর্ণনা:


ওপারিন-হলডেনের পরীক্ষা (Oparin-Haldane's experiment) : ওপারিন-হলডেনের লেখা থেকে অন্য বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এটি হলো এই যে, এমন ধরনের অতি আদিম জীবনের প্রথম উৎপত্তির সময় পৃথিবীর অবস্থা বর্তমান কালের মত ছিল না। 



প্রথমত, বায়ুমণ্ডলে কোন অক্সিজেন ছিল না, ছিল মিথেন, এমোনিয়া, কার্ব মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রভৃতি দুর্গন্ধময় গ্যাস ও কিছু জলীয়বাষ্প। তাছাড়া ছিল কমবেশি পরিমাণ হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, সালফার ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড। 



তখন ভূপৃষ্ঠ এতই উত্তপ্ত ছিল যে, পানি তাতে পড়া মাত্র বাষ্প হয়ে যেত। সকল অক্সিজেন অন্যান্য মৌলিক দ্রব্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল। এমনকি কার্বনও ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মেটাল কার্বাইড গঠন করেছিল। বায়ুমণ্ডলের বাইরে বর্তমানের ন্যায় ওজোনের স্তর ছিল না। তাই সৌরবিকিরণের অতিবেগুনী রশ্মি অবাধে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছাতো। আর উচ্চশক্তি বিকিরণ (যেমন, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি, কসমিক রশ্মি) ও বৈদ্যুতিক বিকিরণ ছিল বর্তমানের চেয়ে বহুগুণ বেশি। ফলে কোন জীবের অস্থিস্তত্বই বহুদিন (প্রায় এক বিলিয়ন বছর) যাবত ছিল না।

ওপারিন ও হলডেনের মতে এমন একটি প্রাণহীন পরিবেশে এসব গ্যাসের উপর বৈদ্যুতিক ও উচ্চ শক্তি বিকিরণের প্রভাবে নানাবিধ জৈব রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপত্তি হয় এবং এগুলো নানাভাবে পরস্পরের মধ্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে আরো জটিল জৈব পদার্থ উৎপন্ন করে। 


এগুলো থেকেই ঝিল্লি তৈরি হয়। ঝিল্লিবদ্ধ জৈব পদার্থ ও প্রোটিনয়ড ক্রমে এনজাইম ধারণ করতেও সেগুলোর সাহায্যে বিপাক ক্রিয়ার ক্ষমতা অর্জন করে, নিউক্লিয়িক এসিড ধারণ করতে ও সেগুলোর সাহায্যে বিপাক ক্রিয়ার ক্ষমতা অর্জন করে, নিউক্লিয়িক এসিড ধারণা করতে থাকে। এটি এর মধ্যস্থিত বংশগতি সংকেত দিয়ে নিজের প্রতিকৃতি তৈরি করতে ও মিউটেট করতে সক্ষম হয়। 


এভাবে প্রথম অতি আদি ও সরল জীবনের উৎপত্তি হয়। এস্তরে জীবন ছিল অকোষীয়। পরে তা থেকে কোষীয় জীবের উৎপত্তি হয়। এখানে মূলকথা অজৈবজনি (abiogenesis), অজীব থেকে জীবের, জড়বস্তু থেকে জীববস্তুর উৎপত্তি।

১৯৫০-এর দশক থেকে দুটি বৈশিষ্ট্যকে জীবনের পরিচয় জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্য বলে মানা হচ্ছে। 

সেগুলো হলো- 

(ক) নিজের প্রতিলিপি তৈরি করা ও 

(খ) মিউটেশন ঘটানোর ক্ষমতা। 


কোষীয় ও অকোষীয় নির্বিশেষে জীবের একটি রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে উক্ত দুটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এ দ্রব্যটি নিউক্লিয়িক এসিড (মূলত ডিএনএ কখনও কখনও আর এন এ)। এটি জড় বস্তু হলেও অনুলিপনের মাধ্যমে নিজের অনুলিপি তৈরি করে ও বেস অনুক্রমে পরিবর্তন দিয়ে বিরল মিউটেশন ঘটায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে ডি এন এ জড় বস্তু হলেও তাতে জীবনের দুটি মৌলিক লক্ষণ আছে। 


কিন্তু কোষের সাহায্য ছাড়া, বিশেষত এনজাইমের সাহায্য ছাড়া, ডি এন এ একা এ দুটি কাজ করতে পারে না। এনজাইম হচ্ছে প্রোটিন। সুতরাং ডি এন এ (অথবা আর এন এ) ও প্রোটিনের উৎপত্তি জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ডি এন এ প্রোটিন উভয়ে পলিমার। 


অর্থাৎ, কিছু এককের সমষ্টি। প্রোটিনের গঠন এককের নাম এমাইনো এসিড। অর্থাৎ, কিছু এককের সমষ্টি। প্রোটিনের গঠন এককের নাম এমাইনো এসিড। মুখ্যত ২০ প্রকার এমাইনো এসিড আছে। এগুলো নানাভাবে পলিমারিত হয়ে তৈরি করে অসংখ্য রকমের প্রোটিন। ডি এন এ (এবং আর এন এ) গঠন একক নাইট্রোজেনাস বেসসমূহ বেস পাঁচ রকমের : এডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন, সাইটোসিন ও ইউরাসিল। 


এগুলো নানাভাবে পলিমারিত হয়ে গঠন করে দু'রকম নিউক্লিয়িক এসিড- ডিএনএ এবং আরএনএ। জীবনের অপর প্রধান উপাদান কার্বোহাইডেট। এ দ্রব্যের মধ্যে সরল শর্করা পলিমারিত হয়ে জটিল কার্বেহাইড্রেট উৎপন্ন হয়। একইভাবে লিপিডের একক গ্লিসারিক এসিড। লিপিড ও প্রোটিন একত্রে যে মিশ্র প্রোটিন তৈরি করে তা দিয়ে লিপোপ্রোটিন ঝিল্লি গঠিত হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, অনেক সরল দ্রব্য থেকে জটিল জৈব বস্তু গঠিত হয়। 


তাহলে যদি দেখানো যায় যে, পৃথিবীর আদিম অবস্থায় যেসব গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান ছিল এবং তখনকার পরিবেশে যেসকল শক্তি সক্রিয় ছিল, তাদের প্রভাবে এমাইনো এসিড, বিভিন্ন সরল শর্করা, জৈব এসিড (বিশেষত ক্রেবস চক্রের) ও বেসসমূহ প্রভৃতি, বিভিন্ন সরল শর্করা, জৈব এসিড (বিশেষত ক্রেবস চক্রের) ও বেসসমূহ প্রভৃতি তৈরি হতে পারে জীবের সাহায্য ছাড়া, তাহলে জীবনের অজৈব জনন বা জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত অনুকল্পটির পক্ষে জোরালে যুক্তি পাওয়া যাবে। 


এ প্রস্তাবে স্বাধীনভাবে করেছিলেন ওপারিন ও হলডেন।


Post a Comment

Previous Post Next Post

ads

ads