ইথনোবোটানির শাখাসমূহ (branches of ethnobotany) :
মানুষ আদিকাল থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। তাই লৌকিক দিকটা সম্পূর্ণ পৃথক করতে পারেনি। মাঝখানে লৌকিক জ্ঞানের অনুশীলন থেকে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে নতুন করে এর অনুশীলন আরম্ভ হয়েছে এবং কদরও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ইথনোবোটানিতে আছে মানুষের সাথে উদ্ভিদের জরিপ, অনুশীলন ও তার চর্চা। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ইথনোবোটানির শাখাসমূহ আলোচনা করা হলো-
ইথনোট্যাক্সোনমি (Ethnotaxonomy) :
আদিকালে উদ্ভিদের আকার-আকৃতি, প্রকৃতি, রং, ব্যবহার, গুণাগুণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে এ শাখাটি গড়ে ওঠে। উপজাতিরা তাদের স্বার্থেই এ সকল উদ্ভিদকে বন-বাদাড় থেকে খুঁজে সংগ্রহ করে এবং তাদের নিজস্ব প্রণালিতে শনাক্তকরণ ও নামকরণ করেন। আদিকাল থেকে এটা চলে আসছে।
প্রখ্যাত বিজ্ঞানী কনকলিন ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম ইথনোট্যাক্সোনমি শব্দটি ব্যবহার করেন। ইধনোবোটানিক্যাল নামকরণের উপর ১৯৭১ সালে প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞানী বি বার্লিন-এর গবেষক ছিলেন। ১৯৭৪ সালে লৌকিক ভাষায় বি বার্লিন ও ড. ই. ব্রিডলভ মায়া প্রথম উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস করেন। ১৯৭৭ ও ১৯৮৪ সালে এ শাখার উপর বিজ্ঞানী ব্রাউন দ্বিতীয় গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৭৬ সালে হান্টিংফোর্ড লোক চিকিৎসায় ব্যবহৃত আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের কিছু উদ্ভিদের লৌকিক নাম ও তাদের বিবরণ বর্ণনা করেন।
১৯৬৩ সালে ভারতের এস. কে. জৈন ইথনোবোটানি সংক্রান্ত গবেষণাপত্রে আদিবাসী জনগণদের ব্যবহৃত লৌকিক নামের উৎপত্তি ও তার গুরুত্ব বর্ণনা করেন। ১৯৫৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত নামের এ বেহাল অবস্থা সারা দুনিয়া জুড়ে ছিল। শ্রেণিকরণবিদ্যার জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস এ
অবস্থা থেকে দ্বিপদী নামকরণ প্রথা প্রবর্তন করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'Species Plantarum'-তে ৬,০০০ প্রজাতির নাম রয়েছে। লিনিয়াসের পূর্বে ভারতবর্ষে উদ্ভিদের লৌকিক নামেরভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাসের চর্চা হয়। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কে. এস. মনিনাল। তিনি মালয়ালম ভাষায়, Hortus Malabaricus নামক বইয়ে চিনি, ভাল, সজিনা, এলাচি ইত্যাদি গাছের লৌকিক নাম দেন।
ইথনোমাইকোলজি (Ethnomycology) :
ঈস্ট, কিছু লাইকেন, Lycopodium এর ন্যায় বহু ফার্ন উদ্ভিদ খাদ্যবস্তু, রং, মসলা, অ্যালকোহল ও ওষুধ প্রস্তুতের ব্যবহার জানত। এসকল গাছপালার অনুসন্ধান, চর্চা ও গবেষণাই ইথনোবোটানির মুখ্য বিষয়।
অনেকদিন পূর্ব হতে মানুষ ঈস্ট ছত্রাককে খামির বলে জানত। এ ঈস্টকে মানুষ খাদ্যবস্তু, ওষুধ ও সফট পনির তৈরি করত। যুগের পরিবর্তনে এ ছত্রাকের সাথে আরও বহু ছত্রাক সংযোজন হয়েছে। ফলে এদের ব্যবহারের নিয়মকানুন ও পদ্ধতির বহু পরিবর্তন ঘটেছে।
ইথনোমাইকোলজি শাখার অজানা লৌকিক জ্ঞানের অনুসন্ধান ও চর্চা চলে আসছে। ভারতবর্ষের আদিবাসী জনগণ মহুয়া ও রোডোডেনড্রন উদ্ভিদের ফুল হতে অ্যালকোহল তৈরি করার পদ্ধতি জানত।
ইথনোমেডিসিন (Ethnomedicine) :
রোগ নিরাময়ে ব্যবহার্য উদ্ভিদ সম্বন্ধে জরিপ চালানো, তার অনুশীলন ও চর্চা করা এ শাখার প্রধান কাজ। এ শাখা লোক-মেডিসিন বা লোক-মেডিকোবোটানি হিসেবে পরিচিত। এ শাখায় ভারতে বহু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ শাখায় কোনো গবেষণা হয়নি। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণের মধ্যে রোগ নিরাময়ে ভেষজ উদ্ভিদের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।
ইথনো এগ্রিকালচার (Ethnoagriculture) :
আদিম মানুষেরা প্রথমে শিকার ধরে কাঁচা মাংস খেয়ে জীবনযাপন করত। আগুন জ্বালানো শেখার পর আগুনে মাংস সিদ্ধ করে খেতে শুরু করে। তারপর কৃষিকাজ করে খাদ্য উৎপাদন।
NB:এছাড়া আরও কিছু ধাপ রয়েছে ইথনোবোটানির। বিস্তারিত জানতে এই পোস্টের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন. আপনার বোটানির কোন টপিকের উত্তর প্রয়োজন। আপনাদের প্রয়োজনে যেকোনো টপিক এর উত্তর সরবরাহ করা হবে৷
ধন্যবাদ।
Post a Comment