Ads

 ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ 


ম্যালেরিয়ার লক্ষণ:

গ্রীষ্মকালে মশার উপদ্রব যেমন বাড়ে, তেমনি ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বর্ষাকালে, মশার প্রকোপ বেশি থাকে এবং এই সময়ে ম্যালেরিয়া সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা যায় কারণ গ্রীষ্মকালে তাদের পাতলা কাপড় পরতে বাধ্য করা হয় বা উলঙ্গ অবস্থায় রাখা হয়, তাই হাত, পা ও শরীরের অন্যান্য অংশ কাপড় ছাড়া থাকলে মশা কামড়াতে সুবিধা হয়। ম্যালেরিয়া সময়মতো চিকিৎসা না করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় বহু মানুষ মারা যায়। তাই ম্যালেরিয়া রোগকে হালকাভাবে না নেওয়াই ভালো। রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। ম্যালেরিয়া একটি সুপরিচিত রোগ। প্রতি বছর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বহু মানুষ। অনেকেই এই রোগে খুব ভয় পান। আজ আমরা ম্যালেরিয়ার লক্ষণের কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব। লেখাটি সম্পূর্ণ পড়লে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ , চিকিৎসা

ম্যালেরিয়া রোগ কি

ম্যালেরিয়া একটি পরজীবী রোগ হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে গরমের সময় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। প্রতি বছর সারা বিশ্বে এই সংক্রামক রোগে বহু মানুষ মারা যায়। যদিও আমাদের দেশের পার্বত্য জেলাগুলিতে এই রোগটি উচ্চ হারে দেখা দেয়, তবে মশার কামড়ে যে কেউ এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে ঢাকা শহর ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত।

ম্যালেরিয়া রোগের কারণ


ম্যালেরিয়া হল মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। রোগটি শুধুমাত্র সংক্রামিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। যদিও এখন পর্যন্ত অনেক প্রজাতির ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু মাত্র চারটি প্রজাতিই মানুষের ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ফ্যালসিপেরাম হল মশাবাহিত ম্যালেরিয়ার সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা। সংক্রমিত মশা কাউকে কামড়ালে জীবাণু রক্তে প্রবেশ করে এবং সেই ব্যক্তি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। তার আক্রমণ মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে যা মৃত্যু হতে পারে।



ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণসমূহ(Symptoms of Malaria)



ম্যালেরিয়া রোগের কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে যা দেখে বোঝা যায় কোন ব্যক্তি ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এই জ্বর সাধারণত ১০৫ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এই প্রকারের জ্বর নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে জ্বর আসা-যাওয়া করে সাধারণত এতে একদিন পরপর জ্বর আসে এবং কখনো যা ৩-৪ ঘন্টা লম্বা হয়ে থাকে এবং তারপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। অনেক সময় জ্বর ছেড়ে গেলেও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যায়। এছাড়া মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত অনুভব হওয়াসহ গায়ে ও মাথায় প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও ম্যালেরিয়া রোগের আরো কতগুলো লক্ষণ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে;


  •  প্রচন্ড মাথা ব্যথা।
  •  ঘুম কম হওয়া বা অনিদ্রা।
  • খাবারের প্রতি অনাগ্রহ বা ক্ষুধামন্দা।
  •  বমি বমি ভাব হওয়া।
  • হজমে গোলযোগ।
  • খিচুনি হতে পারে।
  •  কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • ম্যালেরিয়া হলে রোগীর তলপেটে ব্যথা অনুভব হওয়া সহ অধিক ক্রান্তি বা অবসাদ অনুভব হয়।
  • লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে রোগীর অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
  • অনেক বেশি পিপাসা লাগতে পারে।

ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয়ের উপায়ঃ



ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে রক্তের মধ্য ম্যালেরিয়া জীবাণু আছে কিনা তা খুঁজে বের করা। ম্যালেরিয়া হয়েছে এরূপ সন্দেহ হলেই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে করতে হবে। ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে প্রথমবার পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়ার কোন কিছু আলামত না পাওয়া যায় তাহলে পরপর তিনদিন পরীক্ষাটি করতে হবে।
আর যদি ম্যালেরিয়া সনাক্ত হয় তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই পরজীবী সাধারণত মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে রক্তের ব্লাড ফিল্ম পরীক্ষা দ্বারা জীবাণু সনাক্ত করা হয়। তবে ম্যালেরিয়ার এন্টিজেন পরীক্ষা করে রোগটি সনাক্ত করা হয় যাতে সময় কম লাগে।



ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসাঃ


চিকিৎসা নির্ভর করে রোগী কি ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর। আর জীবাণু দ্রুত সনাক্তকরণ চিকিৎসার প্রধান উপায়। এই রোগ হলে ডাক্তারগণ ক্লোরোকুইন জাতীয় ঔষধ দিয়ে থাকেন যা এ পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকারি ওষুধ। তবে ওষুধ খাওয়া শুরু করবার পর ওষুধের পুরো কোর্স খাওয়া উচিত। তাই ম্যালেরিয়ার জটিলতা দেখা দিলেই অতিসত্বর চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। এমন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা করা উচিত যেখানে সবরকম সুব্যবস্থা রয়েছে। ভয়ের কোনো কারন নেই , ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা শুরু হলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন। 



ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের উপায়ঃ 


ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত কোন কার্যকার টিকা আবিষ্কৃত হয়নি।তবে এই রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ যোগ্য মশা থেকে বেঁচে থাকা অর্থাৎ মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়। মশার উপদ্রব
 থেকে বাঁচতে নিচের কাজগুলো করা যেতে পারে।

  1. দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে রাতে শোয়ার আগে অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।
  2. বাড়িঘর ও এর আশেপাশে যাতে মশা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  3. জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পাড়ে। বেশি তাই ঘরের আশেপাশে কোথাও অবাঞ্ছিত পানি জমতে দেওয়া যাবেনা। এসব স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
  4. ম্যালেরিয়া মশাম মূলত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্য কামড়ায়। তাই সন্ধ্যা থেকে শোয়ার আগে শরীরের খোলা অংশগুলোতে মশা তাড়ানোর ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
  5. দরজা জানালায় মশা নিধক জাল প্রতিরোধক ক্রিম স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  6. মশারি ব্যবহার না করলে মশা তাড়ানোর ধুপ ও ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।
8. ওষুধ খেয়ে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতিটি যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য নয়।কোন অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব থাকলে এবং ওই ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে যাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধ সেবন করে নেয়া উচিত।



ম্যালেরিয়ার ল্যাবরেটরী পরীক্ষা ও ট্রিটমেন্টঃ 


ম্যালেরিয়া রোগের উপর স্বর্গ এবং ভ্রমণ ইতিহাস জেনে রক্তের ব্লাডফিল্ম নামক পরীক্ষা করতে হয়।


  •  সি বি সি
  • পিবিএফ

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে বা শিরা পথে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। যেমন-

1. Chioroquine.

2. Quinine sulfate.

3.Hydroxy chloroquine

4.Mefloquine

5.Sulfadoxine

6.Pyramethamine

এর যেকোনো একটি অথবা কয়েকটি ওষুধ সেবন করতে হবে। ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ম্যালেরিয়া আমাদের কারো কাছে এখন অপরিচিত কোন রোগ নয়। রোগটি নিরাময় যোগ্য ও প্রতিরোধ যোগ্য। তবে ক্ষেত্র বিশেষে জীবনঘাতী হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত রোগটির জনশাস্তের জন্য হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। তাই সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা কবি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ভ্রমণের আগে অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ঔষধ খেয়ে নেওয়া জরুরী। গত ছয় বছরে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে সরকারের পাশাপাশিস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে।


কোন সময়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে?


গরমকালে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ে‌ ম্যালেরিয়া ঝুঁকি।

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post

ads

ads